dc.description.abstract |
বাজার ব্যবস্থাপনা, বিপণন, বাজারিকরণ ও মান বিবেচনায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অন্য সব সময়ের
চেয়ে বর্তমানে ভয়াবহ সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। এর সবচেয়ে বড়ো উপসর্গ সারাদেশে একের পর এক
প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হওয়া। পরিবর্তন এসেছে দর্শক ও আধেয়তে। বিষয়টি সামাজিক স্তরবিন্যাসের সঙ্গে সঙ্গে
সামাজিক শ্রেণির সঙ্গেও সম্পৃক্ত। এই পরিস্থিতিতে চলচ্চিত্রের পরিসরকে নিচ থেকে মানে প্রান্তিক মানুষ
যেমন, প্রেক্ষাগৃহ সংশিষ্টø ব্যক্তি ও সমসাময়িক দর্শকের দিক থেকে অনুসন্ধান করা হয়েছে। সেই অনুসন্ধানে
যেমন গবেষকের নিজের অভিজ্ঞতাকে মেলানো হয়েছে, তেমনই এ সংμান্ত বিদ্যমান যে তত্ত¡, তথ্য ও
বোঝাপড়া আছে, তারও সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়েছে। আর এই তিনে মিলে যে ইতিহাস রচনা করা হয়েছে,
তাই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের নৃতাত্তি¡ক ইতিহাস হয়ে উঠেছে। ১৯৫৬ তে মুখ ও মুখোশ দিয়ে পূর্ববঙ্গে যে
চলচ্চিত্রযাত্রা শুরু হয়েছিলো তা দর্শকের কাছে প্রযুক্তির জাদু-বাস্তবতা হিসেবে হাজির হয়। এই সময়ের
চলচ্চিত্রের দ্ইুটি বিষয়কে মাথায় রাখতে হয়েছে। একটি গ্রামীণ কৃষিজীবী সমাজের যে আখ্যান, উপাখ্যান,
রূপকথা, পরিচিত সাহিত্য ও তাতে জাদু-বাস্তবতা প্রয়োগ এবং অন্যটি শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যারা
তাদের নিজেদের গল্প চলচ্চিত্রে নির্মাণের চেষ্টা করেছেন। জাদু-বাস্তবতা, মধ্যবিত্তের নিজের গল্প বলার
চেষ্টা ও গ্রামীণ উপাখ্যান এই তিন মিলে ৬০ দশকে তখনকার রাজনৈতিক ইতিহাস ছাপিয়ে সামাজিক
ইতিহাসের টানাপড়েন চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ৭০ দশকে রাষ্ট্রবিপ্লবের উচ্ছ¡াসে রাষ্ট্রীয়
বিনিয়োগে জাতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণের আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হলেও তা শিক্ষিত মধ্যবিত্তের সমাজ-বাস্তবতার সঙ্গে
সমন্বয়হীনতার কারণে ঠিক যা ঘটার ছিলো তা ঘটেনি। রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগে জাতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণের
আকাক্সক্ষায় কিছু না হওয়ায় তা ৮০’র দশকে ইন্ডাস্ট্রি অর্থে চলচ্চিত্রের প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। একটা
পক্ষ এ সময় ব্যাপক বিনোদন বাণিজ্য শুরু করেন, সফলও হন। ফলে ৯০ দশকে গিয়ে সামাজিক প্রতিষ্ঠান
হিসেবে প্রেক্ষাগৃহের ভিত্তি নষ্ট হতে থাকে। এছাড়া স্যাটেলাইট টেলিভিশন, সিডি প্লেয়ার চলচ্চিত্রের
সমান্তরালে দাঁড়িয়ে যায়। সব মিলিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী দর্শক প্রেক্ষাগৃহ ত্যাগ করেন। তখন
কেবল অন্য প্রাযুক্তিক সুযোগ নেই এমন লোকজন প্রেক্ষাগৃহে আসতে থাকেন। ফল হিসেবে নারী
দর্শকবিহীন প্রেক্ষাগৃহে সহিংস ও যৌনচলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু হয়। শূন্য দশকে তা চরম আকার ধারণ করে
এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রেক্ষাগৃহ তার সর্বশেষ চরিত্রটুকু হারিয়ে ফেলে। এই পরিস্থিতিতে ৭০ ও
৮০’র দশকের উত্তরাধিকার বহন করা একটি পক্ষ নতুন ধরনের চলচ্চিত্র, সিনেপ্লেক্স বাণিজ্য ও
ইন্টারনেট ভিত্তিক বিনোদনে সম্পৃক্ত হয়। সেই বিনোদনে মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত প্রবলভাবে উপস্থিত থাকলেও
গণমানুষ নেই বললেই চলে। এ রকম একটা বোঝাপড়ার আলোকে এই অভিসন্দর্ভে বাংলাদেশের
চলচ্চিত্রের নৃতাত্তি¡ক ইতিহাস লেখার চেষ্টা করা হয়েছে। |
en_US |